Saturday, May 1, 2010

যৌনসম্পর্ক, সৎকার ও খাদ্য সম্পর্কিত রীতি-নীতির মালিকানা ও শ্রেষ্ঠত্য দাবী করার গড়পরতা চিন্তার ব্যাপারে কিছু কথা

কগচডড এর চিন্তার টাইপটাকেই আমার কাছে সমাজের গড়পরতা চিন্তার প্রতিনিধিত্বকারী বলে মনে হয়েছে। কগচডড এর দলই ভারী হবে বলে বোধ করি, যদি ভোটাভুটি হয়। ছেলেমানুষি হিংসা দোষারোপের সাথে সাথে অস্ত্র হিসেবে আছে নৈতিকতার সেই বহুল ব্যবহৃত উপাদান যা দুই পায়ের ফাঁকে থাকে। আজকাল মনে হয় পুরো নৈতিকতাই যেন শুধু যৌনতাভিত্তিক। সেই দিক থেকে দেখলে পুরো নৈতিকতাই এখন যৌনতার সাথে সাথে দুই পায়ের ফাঁকে আস্তানা গেঁড়েছে।

কগচডড,এই লেখা মূলত আমি আপনার জন্যই লিখছি। বাংলাদেশের মত একটা দেশে কম্পিউটারের উপর লেখা পড়া করা মানুষ অনেক দামী। স্বাভাবিকভাবেই এমন মানুষের সমাজচিন্তা আরো দশজনের উপর প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আপনার লেখা পড়ে যেসব ছেলেমানুষি কুযুক্তি আর শায়েস্তা করার বালখিল্যতা দেখলাম তাতে আমি হতাশ।

প্রশ্ন তিনটাতে যাওয়ার আগে আর একটা কথা স্পষ্ট করে নিই। ঠিক জয়-পরাজয়ের কোন নিয়ত নিয়ে আমি লিখছিনা। আপনি আপনার চিন্তা প্রকাশ করেছেন। তাই অন্যদের চিন্তার সাথেও পরিচিত হবার ইচ্ছা রাখেন বলেই ধরে নিচ্ছি। অনেকের কথা পড়ার পর আপনার চিন্তা জগতে যে পরিবর্তন আসবে সেটাই আসলে আপনার-আমার জয়।


আপনার এই ব্লগ এ আস্তিক নাস্তিক তক যুদ্ধ এবং আমার কিছু জানতে ইচ্ছে করে।(অশ্লীল পোস্ট নয়) পোস্টে যে তিনটা প্রশ্ন আপনি করেছেন -



১) আপনেরা নিজেদের আপন মা ও বোনদের সাথে সহবাস করতে পারবেন না কেন? আমরা যেহেতু ইসলাম এর অনুসারি তাই আমরা এইতা করতে পারব না। ইসলাম এইটা সুনিদিস্ট ভাবে হারাম করেছে। কিন্তু আপ্নারা ত কোন ধরমের ই না আপনাদের জন্য ত এইতা জায়েয। তাহলে দেরী কেন?


সমাজে মা বোনের সাথে সঙ্গম নিন্দিত। আপনার অপছন্দের মানুষদের আঘাত করতে তাই আপনি তাদেরকে খোঁটা দেয়ার চেষ্টা করেছেন - “তাহলে দেরী কেন?” ! আপনার ধারণা ইসলামই এই ট্যাবুর একমাত্র মালিক। তাই আপনি সেই মালিকানার দোহাই দিয়ে নিজেকে সেভ করেছেন। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকেরাও কি এই ট্যাবু মেনে চলেনা? চলে তো তাইনা? তাহলে এই ট্যাবুর ব্যাপারে কি শ্রেষ্ঠত্য শুধু আপনার?

সমস্যা হল যে তাহলে নাস্তিকদের কি হবে? তারা তো কোন ধর্মেই নেই! কেন এত বিষয় বাদ দিয়ে নাস্তিকদের যৌনতা নিয়ে আপনার আগ্রহ সবচেয়ে প্রথমে এলো? কারণ আপনার নৈতিকতাবোধ গড়পরতা মানুষের মত যৌনতাসর্বস্ব। আর তাই কাউকে ডিফেইম করার জন্য যখন আপনি তাকে নৈতিকতাবর্জিত হিসেবে দেখাতে চান তখন আপনার কাছে একমাত্র পথ যৌনাতার ট্যাবু দিয়ে তাকে ঘায়েল করা। কেন এই প্রশ্ন আসে যে যাও এবার মা বোনের সাথে শোও? ঠিক এভাবে পাল্টা প্রশ্নও কিন্তু করা যেতে পারে যে ঠিক আছে এবার সদ্য ঋতূমতি হয়েছে এমন মেয়ের সাথে শোও। আপনি ইসলাম পালন করেন তাহলে কি আপনার সদ্য ঋতূমতি হয়েছে এমন মেয়ের সাথে শোয়ায় কোন বাঁধা বোধ করার কথা? না! কিন্তু আমার ধারণা আপনি ১২/১৩ বছরের মেয়ের সাথে শুতে বিবেকের বাঁধা অনুভব করবেন? কেন? সেই ট্যাবু তো ধর্মের না? খেয়াল করুন। ধর্ম নিষেধ করেনি বরং সেরকম কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছে যে করলে অসুবিধা নেই, এমন কাজের ব্যাপারেও আপনি ট্যাবু মেনে চলেন। ধর্ম সুযোগ দিলেও আপনার মেনে চলা ট্যাবুর কারণে ১২/১৩ বছরের মেয়ের সাথে আপনি সঙ্গম করবেননা। আপনি এই ট্যাবু কোথা থেকে পেয়েছেন? এই ট্যাবু তো ধর্মের না!

নাস্তিকরা ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখেনা বলে তারা মা বোনের সাথে সঙ্গম না করার ট্যাবু ভাঙতে বাধ্য না, ঠিক যেমন ইসলামের বিধান-উদাহরণ পাশ কাটিয়ে হলেও আপনি ১২/১৩ বছরের মেয়ের সাথে সঙ্গম না করার ট্যাবু ভাঙতে বাধ্য না।



২) আমরা গরু মাংস খাই কিন্তু কুকুর , শুকর খাইতে পারি না। আমরা যেহেতু ইসলাম এর অনুসারি তাই আমরা এইতা করতে পারব না। ইসলাম এইটা সুনিদিস্ট ভাবে হারাম করেছে। কিন্তু আপ্নেরা কেন পারবেন না?


ধরুন আপনি শুটকি খাননা। কিন্তু আপনার বন্ধু খায়। তাহলে কি আপনি এই দাবী করতে পারেন যে আপনি গরুর মাংস খেলে আপনার বন্ধু গরুর মাংস খাওয়ার অধিকার হারাবে যেহেতু সে শুটকির ব্যাপারে আপনার সাথে দ্বিমত করেছে? আপনি কুকুরের মাংস খাননা ধর্মের নিষেধ তাই। আর একজন খায়না তার ভাল লাগেনা বা অভ্যেস নেই তাই।

আজ যখন গরুর মাংসের ব্যাপারে বলা হচ্ছে যে তাতে হাই কোলেস্টেরল আছে তখন আপনি ধর্মের নিষেধ না থাকলেও হয়তো তা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আপনার স্বাস্থ্য চিন্তা, অভিরুচির ব্যাপার, যদিও ধর্মে খেতে না করা হয়নি। ঠিক একইভাবে যে শুকরের মাংস খায়না সেও হয়তো এই কারণে খায়না যে শুকরের মাংসে হাই কোলেস্টেরল আছে। কোন ধর্মে আছে আর কোন ধর্মে নেই সেটা তার বিবেচনার বিষয়না খাবার বাছাইয়ে।




৩) আপনাদের ম্রিতুর পর আপনাদের দাফন কাফন কি ভাবে হওয়া উচিত? আমাদের কিরকম হয় তা আপ্নারা ভালই জানেন। আপ্নারা কোন standard follow করতে চান?


হোকনা, কবরই হোক! মেনে নেবেননা! কেন? কবর দেয়া কি ইসলামের একক মালিকানার বিষয়? ইহূদী খৃষ্টানরা যদি বলে বসে যে ইসলাম আসার আগে থেকেই তারা কবর দেয় তাহলে তো আপনি আপনার কবরের অধিকার হারাবেন, তাইনা? আচ্ছা আর একটা কথা, মুসলমান হলেই তার কবর দেয়া সম্ভব সব সময়? যেকালে মানুষ জাহাজে করে হজ্জ্বে যেত সেকালে জাহাজে কারোর মৃত্যু হলে তো তার সলিল সমাধি হওয়ার কথা। বা তারও আগে যখন আরব মুসলমানরা সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য জলপথে যাতায়াত করতো তখন? ইসলাম আসারও আগে নবীর বাবা মার মৃত দেহের কিভাবে সৎকার হয়েছিলো? নিজেকে উত্তর দিন। নিজের যুক্তির বাঁধনগুলো শক্ত করুন। কবর প্রসঙ্গে আর একটা পুরাতন লেখার কথা মনে পড়ে গেল । ইচ্ছা হলে দেখতে পারেন View this link


নিজের সাথে কথা বলুন। বিষয়টা খুব জরুরি।