Thursday, November 5, 2009

মঙ্গলসূত্র, মূর্তি ও মৃতদেহ সৎকার - ভুলকে ভুল দিয়ে ঠেকালে জয় হয়তো আসে ঐ দ্বৈরথে কিন্তু তারপর ...?

তিনটা বোকা কথার জবাবে দেয়া তিনটা ইন্টারেস্টিং উত্তর পড়লাম। আর তার পাঠপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মনে আসা কিছু প্রশ্ন -

বিবাহিত হিন্দু মহিলা মঙ্গলসূত্র পরে। জাকির নায়েকের কাছে এক হিন্দু বলেছে যে মঙ্গলসূত্র নাকি বিবাহিত মহিলাদেরকে টিজিং এর হাত থেকে বাঁচায়! (লেখার সময়ই মনে পড়লো সঞ্জয় দত্তের বাস্তব বা হাতিয়ার সিনেমায় এর ঠিক বিপরীত একটা দৃশ্য আছে!) যাহোক মঙ্গলসূত্র “ইজ্জত” বাঁচাবার জন্য কোন কার্যকর পথ না তা “যৌক্তিকভাবে” তুলে ধরার জন্য জাকির নায়েকের পেশকৃত বক্তব্যগুলোর এক জায়গায় বলা হয়েছে যে লাল সিঁদুর বা কালো মঙ্গলসূত্র কোনটাই দরকার নেই। কারণ আল্লাহই সব ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম এবং ইসলামে বিবাহিত-অবিবাহিত মুসলিম-অমুসলিম যেকোন নারীকেই টিজ করা নিষেধ! ইন্টারেস্টিং।

যেহেতু ঈশ্বরই রক্ষা করবেন সেহেতু মঙ্গলসূত্রের দরকার নেই । ঠিক একইভাবে যেহেতু ঈশ্বরই রক্ষা করবেন সেহেতু বোরখার কি দরকার আছে? শুধু ঈশ্বরের ক্ষমতার উপর নির্ভর করলেই কি হতোনা?

আবার ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেতে যদি বোরখা পরার দরকার হয়, তাহলে “ইজ্জত” বাঁচানোর জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেতে মঙ্গলসূত্রেরও দরকার আছে বলে মনে করা যায়, তাই না?

মূর্তি পূজার ব্যাপরে হিন্দুদের বেদে নাকি নিষেধ আছে। কিন্তু চেতনার উচ্চস্তরে না থাকতে পারলে উপাসনার ব্যাপারে মনকে কেন্দ্রীভূত করা যায়না বলে মূর্তি পূজা করা হয় বলে বলা হয়েছে। জাকির নায়েক এইবার কষে ধরেছে! তার কথা হল যে তাহলে মুসলমানরা চেতনার সেই উচ্চস্তরে পোঁছে গিয়েছে যাতে তারা মূর্তি ছাড়াই মনকে কেন্দ্রীভূত করতে পারে প্রার্থণার জন্য। ইন্টারেস্টিং!

আসলেই কি ফিজিকাল স্ট্রকচার ছাড়াই উপাসনার কাজগুলো করা হয়? কাবার দিকে নামাজ পড়ার ব্যাপারটা কি ফিজিকাল স্ট্রাকচার কেন্দ্রীক আইডিয়া না? জাকির নায়েকের মত অনু্যায়ী মন যেহেতু চেতনার হায়ার লেভেলে আছে সেহেতু যেকোন দিকেই তো প্রার্থণা ঠিক ঠাক হওয়ার কথা! “আল্লাহর ঘর” এর মত একটা ফিজিকাল স্ট্রাকচারের দিকে মুখ করে ঈশ্বর প্রার্থণা করাটা কি এটারই ইঙ্গিত নয় যে মন আসলেও চেতনার সেইরকম উচ্চস্তরে পৌঁছাতে পারেনি?

আচ্ছা ধরে নিলাম মন উঁচু স্তরে উঠেছে। মূর্তির সামনে উপাসনা করার জন্য চেতনার যে নিম্ন স্তর আছে বলে বলা হয়েছে তার চাইতেও উঁচু চেতনা স্তরে – দূরবর্তী ফিজিকাল স্ট্রাকচারকে কেন্দ্র করে উপাসনা পদ্ধতির চেতনা স্তরে - পৌঁছে যাওয়া মানুষ আছে। তাহলে চেতনার সেই স্তরের উপরের স্তরেও তো কিছু মানুষ থাকতে পারে, তাইনা?

কেন শবদাহ না করে ইসলামে কবর দেয়া হয়? এ প্রশ্নের সবচেয়ে ভাল উত্তর হতো যে কেন কবর না দিয়ে শবদাহ করা হবে? সব জায়গাতেই বোধহয় নাম, সৎকার, জন্ম এসবকে সোল প্রপার্টি হিসেবে দেখার এই ইচ্ছাটা বর্তমান। যাহোক, শবদাহের তুলানায় কবর দেয়াটা বেশি যৌক্তিক প্রমাণ করতে গিয়ে জাকিরের বয়ান হল মানব দেহের এলিমেন্টগুলো নাকি কম বেশি মাটিতেও আছে সেহেতু কবর দেয়াটাই বৈজ্ঞানিক! তা থাকতে পারে কিছু কমন এলিমেন্ট, বুঝলাম।

মানবদেহের ৬৫ শতাংশ পানি। একই এলিমেন্ট থাকাটা দিয়ে যদি মাটিতে কবর দেয়ার ব্যাপারটা জাস্টিফাই করা হয় তাহলে তো সলিল সমাধিই বেটার, তাইনা?

ভুলকে ভুল দিয়ে ঠেকালে জয় হয়তো আসে ঐ দ্বৈরথে কিন্তু তারপর …?

2 comments:

  1. হাহাহা মজা পেলাম লেখা টায়। :)

    সলিল সমাধিই বেটার আই থিন্ক!

    ReplyDelete
  2. অনেক ধন্যবাদ রাসেল। মন্তব্য ছাড় করাতে এত দেরী হওয়ায় দুঃখিত।

    ReplyDelete